গত ১৫ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে গাজীপুরের কোণাবাড়িস্থ মেঘের ছায়া রিসোর্টে হয়ে গেল ইসাজ দ্বিতীয় গেট টুগেদার অ্যান্ড ফ্যামিলি ডে আউট। সারাটা দিন যশোর শাহীনের এক্স স্টুডেন্টদের জন্য ছিল এক অতুলনীয় দিন। প্রাপ্য সন্মান এবং ভালবাসা বজায় রেখে সবাই বয়সের ব্যবধান ভুলে মেতে উঠেছিল এক অনিন্দ্য আনন্দে। অসাধারণ সব আয়োজনে মাতিয়ে রেখেছিল সম্পূর্ণ রিসোর্ট অঙ্গন। ইসাজ ছাড়াও আরও অন্তত ১০টি গ্রুপ ছিল এই রিসোর্টে ঐদিন। কিন্তু ইসাজের আয়োজনগুলো ছিল এতটাই মার্জিত এবং আনন্দদায়ক যে একটা সময়ে বাকি সকল গ্রুপ নিজেদের আয়োজন ভুলে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট মাঠের চারপাশে গোল হয়ে দাড়িয়ে আমাদেরকে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। আমরা কৃতজ্ঞ তাদের কাছে।
এই “গেট টুগেদার অ্যান্ড ফ্যামিলি ডে আউট” টা আসলে গত কুরবানি ঈদের পরদিন যশোরে হওয়া প্রথম গেট টুগেদারের ধারাবাহিকতা এবং কলেজ ক্যাম্পাসে আমাদের গ্র্যান্ড রিইউনিয়নের দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। ১৫ তারিখে এই গেট টুগেদার অ্যান্ড ফ্যামিলি ডে আউট অনুষ্ঠিত হলেও কাজ শুরু হয় আরও অনেক আগে। প্ল্যানিং, ভেন্যু ঠিক করা, রেজিস্ট্রেশন সব কিছু বেশ আগে থেকেই শুরু করা করা হয়। প্রথমেই ঠিক করা হয় কোন স্পট রেজিস্ট্রেশন থাকবে না। কারণ যেহেতু প্রোগ্রামটা ঢাকার বাইরে এবং একটি রিসোর্টে করা হচ্ছে সেহেতু খাবারের হিসাব এবং বাকি সব আয়োজন আগে থেকেই ঠিক করতে হয়েছিল। স্পট রেজিস্ট্রেশন না থাকার কারনে উপস্থিতি প্রত্যাশার তুলনায় হয়ত একটু কম হয়েছিল কিন্তু সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ আয়োজনটি করতে এই সিদ্ধান্তের কোন বিকল্প ছিল না। কিন্তু আয়োজনটি এতটাই ভাল ছিল এবং সবাই এত মজা করেছে যে, এই বিষয়টি আর পরে আমাদের মনে ছিল না।
যাই হোক, প্রস্তুতি শুরু হয় বিজয় সরণীস্থ “দি এন্ট্রান্স” রেস্টুরেন্টে ইসাজের মীটিং থেকে। প্রাক প্রস্তুতির অংশ হিসাবে এখানে ইসাজের আরও কয়েকটি মীটিং হয়। এইসব মীটিং এ সবার কাজ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় এবং নিয়মিত ফলোআপ করা হয়।

“দি এন্ট্রান্স” রেস্টুরেন্টে প্রস্তুতিমূলক মীটিং চলছে। (আরও ছবি দেখুন)
মূল প্রস্তুতি শুরু হয় ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে ভেন্যু পরিদর্শনের মাধ্যমে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে ঐ দিন সকাল ৭ টায় কামাল (এইস এস সি ব্যাচ ১৯৮৬), মাহফুয (এইস এস সি ব্যাচ ১৯৮৮), হ্যামলেট (এইস এস সি ব্যাচ ১৯৯০) এবং প্রান (এইস এস সি ব্যাচ ২০০৫) ছুটে চলে গাজীপুরের কোণাবাড়িস্থ মেঘের ছায়া রিসোর্টের উদ্দেশ্যে। কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয় তাদের। তীব্র শীত এবং ছুটির দিন হওয়াতে সবাই যখন তখনও বিছানাতে তখন তারা এসব ভুলে ছুটছেন ইসাজের জন্য। অবশ্য নাহিদ (এইস এস সি ব্যাচ ২০০৩) মেঘের ছায়া রিসোর্টের সাথে আগেই প্রাথমিক কথাবার্তা সেরে রেখেছিল।

ভেন্যু পরিদর্শন। (আরো ছবি দেখুন)
ভেন্যু ঠিক হওয়ার পর চলে রেজিস্ট্রেশনের পালা। অনলাইনেও ছিল রেজিস্ট্রেশন করার সুবিধা। ক্রেস্ট তৈরি, প্রোগ্রামের শিডিউল তৈরি করা, খাবারের ব্যবস্থা করা; অনেক কাজ। হাতে সময় ছিল অল্প। এর মাঝেই সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে এল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন (১৫ জানুয়ারী ২০১৬)। ভাড়া করা বাস নিয়ে আমরা রওনা দিলাম সকাল ৮টার দিকে বিজয় সরণীস্থ “দি এন্ট্রান্স” রেস্টুরেন্ট থেকে। পথে বিভিন্ন যায়গা থেকে অনেকে উঠলেন বাসে। অনেকে আবার নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় ভেন্যুতে পৌঁছিয়েছিলেন। বাস যাত্রাটি ছিল এক কথায় অসাধারণ। আড্ডা, গান, মজা, নাচ – কি ছিল না। এসব করতে করতে রাস্তার জ্যাম ঠেলে সকাল প্রায় ১১টার দিকে আমরা পোঁছালাম ভেন্যুতে। ওখানে যারা নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় গিয়েছিলেন তারা অবশ্য আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু একটা কথা মানতেই হবে তারা এই বাসযাত্রাটা মিস করেছেন। ওখানে পৌঁছে সবার জন্য একটা চমক ছিল; আর তা হল জহির স্যার। স্যার অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন যে তিনি আসবেন। কিন্তু শুধুই এই অনুষ্ঠানের জন্য যে তিনি যশোর থেকে ঢাকা আসবেন এটা অনেকের কাছেই চমক হিসাবে ছিল। তিনি যে কতটা যশোর শাহিন অন্তপ্রান তা তিনি আবার বুঝিয়ে দিলেন।

যাত্রা শুরু। (আরো ছবি দেখুন)
খাবারের টোকেন সংগ্রহ এবং ব্রেকফাস্ট বিতরণ দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হল আমাদের গেট টুগেদার। ব্রেকফাস্ট শেষে সবাইকে সময় দেয়া হল রিসোর্টটি একটু ঘুরে দেখার জন্য। তারপর বাচ্চাদের বল নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা এবং মহিলাদের বালিশ বদল প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করে জুম্মার নামজের এবং দুপুরের খাবারের বিরতি দেয়া হয়।

বাচ্চাদের বল নিক্ষেপ। (আরো ছবি দেখুন)
নামাজ এবং খাবার শেষে শুরু হয় সবথেকে আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা, আর তা হল জহির স্যারের উপস্থিতি তে “Adjujant” কে ডার্ট নিক্ষেপ করা। সব থেকে মজার বিষয় হল এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ও করলেন স্যার নিজেই সর্বপ্রথম ডার্ট ছুড়ে। স্যার পুরা প্রতিযোগিতাটিকে অনেক স্পোর্টিংলি নিয়ে আবারো আমাদেরকে মুগ্ধ করলেন। অবশ্য “Adjujant” এর সন্মান বজায় রাখতে ইচ্ছা করেই “Adjutant” এর বানান ভুল (Adjutent) করা করা হয়। এই প্রতিযোগিতাটি নিয়ে সবাই কতটা উত্তেজিত ছিলেন তা একটি উদাহরণ দিলেই সবাই বুঝবেন। নামাজ এবং খাবারের বিরতিতে অনেকে রীতিমত প্র্যাকটিস করতে থাকেন। যাই হোক সবাই তিনটি করে ডার্ট ছুড়েন। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। সব ভালোরই একটা শেষ থাকে। অবশেষে এই অসাধারণ প্রতিযোগিতাটি শেষ হয়। কিন্তু রেশ থেকে যায়।

Adjutant কে ডার্ট নিক্ষেপ। (আরো ছবি দেখুন)

জহির স্যার Adjutant কে ডার্ট নিক্ষেপ করছেন। (আরো ছবি দেখুন)
সব শেষে শুরু হয় র্যাফেল ড্র, পুরস্কার বিতরণী এবং আলোচনা অনুষ্ঠান। কোন আলোচনা ও যে এতটা প্রাণবন্ত হতে পারে তা না দেখলে বোঝায় না। জহির স্যার পর্যন্ত একবার কথা বলে আবার নিজে থেকে মাইক চেয়ে নিলেন। কামাল (এইস এস সি ব্যাচ ১৯৮৬) এর স্বাগত বক্তব্য দিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন জহির স্যার এবং সমাপনি বক্তব্য প্রদান করেন মাহফুয (এইস এস সি ব্যাচ ১৯৮৮)। সব শেষে বিকালের নাস্তা শেষে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আবারো বাস যাত্রা, আবারো মৌজ-মাস্তি।

জহির স্যারের গঠনমুলক বক্তব্য। (আরো ছবি দেখুন)

কামাল (এইচ এস সি ব্যাচ ১৮৮৬)। (আরো ছবি দেখুন)

মাহফুয (এইচ এস সি ব্যাচ ১৯৮৮)। (আরো ছবি দেখুন)
প্রত্যেকে যার যায়গা থেকে অনেক বেশি পরিশ্রম করেছেন। সবার প্রতি ইসাজ জানাচ্ছে অশেষ কৃতজ্ঞতা।